কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজারে তৃণমুল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ও নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া উপজেলায় অধিকাংশ ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির কাউন্সিল শেষ পর্যায়ে। আওয়ামী লীগের তৃণমুলে হাইব্রিডের অনুুপ্রবেশের হিড়িক পড়েছে।
জানা যায়, ইউনিয়ন কমিটিতে ছলে বলে কৌশলে রাজাকার পুত্র, জামায়াত, বিএনপির নেতা কর্মী ঢুকে পড়ছে। কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটিতে ঢুকতে মরিরা জামায়াত বিএনপির অসংখ্য নেতা কর্মী।
২৮ অক্টোবর কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগে বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সক্রিয় কর্মী নাশকতার মামলার আসামী সিরাজদৌল্লাহ। এ নিয়ে আওয়ামী লীগে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছফা বি,এ জানান, সিরাজ একজন রাজাকারের সন্তান। সে নিজে জামায়াতের রাজনীতির সংগে জড়িত। তার পুরো পরিবার জামায়াত বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। নাশকতার মামলার এই আসামী সিরাজকে বর্ধিত সভায় দাওয়াত করা হয়নি। কিন্তু কৌশলে সে সভায় উপস্থিত হয়। তবে তাকে বর্ধিত সভায় উপস্থিত করার জন্য আওয়ামী লীগের কোন নেতা জড়িত আছে। শুধু সিরাজ নয় লেমশিখালী ইউনিয়নের যুবদলের সাবেক সভাপতি নেজাম ও বিএনপি নেতা আকতার হোসেনও আওয়ামী লীগে পা ঢুকিয়েছে। অনুপ্রবেশ করতে তাদের দৌড়ঝাঁপ বেড়ে গেছে। এমন কি তারা আওয়ামী লীগের প্রধান পদে আসার জন্য লবিং শুরু করেছে। তারা আওয়ামী লীগের কিছু নেতাদের টাকা দিয়ে কিনতে মাঠে নেমেছে। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে পেকুয়া আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির পরিচিতি সভায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের পৃষ্টপোষক ও জামায়াতের সমর্থন নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া লায়ন মুজিবুর রহমান। তিনি এখন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে রাজাকার শাহদাতের পুত্র মকছদু আলম সভাপতি এবং বিএনপি পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচিত হয়েছেন।
এই ঘটনা নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগে অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়ে হোয়ানক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা জালাল আহমদ বাঁশি বলেন, তালিকাভুক্ত রাজাকার শাহদাতের ৪ পুত্র কৌশলে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে। তারা রাতারাতি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর হয়। তাদের সাথে আরো অর্ধশত জামায়াত বিএনপির নেতা কর্মীদের কাউন্সিলর করা হয়। পরে সেই অনুপ্রবেশকারিরা ৩০ অক্টোবর ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে রাজাকার পুত্র মকছুদ আলম সভাপতি ও বিএনপি পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলমকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে। এতে ত্যাগী নেতা কর্মীরা দল থেকে ছিটকে পড়ে।
কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কাউন্সিলে ঢুকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জেলা বিএনপির সদস্য পৌর কাউন্সিলর আকতার কামাল, বিএনপির জানু বহদ্দার, জসিম বহদ্দার, আবদুল মান্নান, সাবেক যুবদল সদস্য কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক ছাত্রদল সভাপতি মো: ফেরদৌসসহ আরো অনেক জামায়াত বিএনপির নেতা কর্মী। এ ব্যাপারে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলাম জানান, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম প্রশংসনীয় ও পরিচ্ছন্ন। পৌরশহরে বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটিতে অনেক আগে থেকে হাইব্রিড ঢুকার চেষ্টা করেছিল। আগেও কোন অনুপ্রবেশকারি ঢুকতে পারেনি এখনো পারবেনা। এই পর্যন্ত একজনও হাইব্রিড পৌর আওয়ামী লীগের কোন কমিটিতে অনুপ্রবেশ করতে পারেনি।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান, নানা কৌশলে তৃণমুল পর্যায়ে আওয়ামী লীগে জামায়াত বিএনপি অনুপ্রবেশ করছে। এমন কি অনেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েও আওয়ামী লীগে ঢুকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মহেশখালীর একটি ইউনিয়নে রাজাকার পুত্র ও বিএনপি পরিবারের পুত্র অনুপ্রবেশের ঘটনা উদ্বেগজনক।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা জানান, ছলে বলে কৌশলে আওয়ামী লীগে যারা অনুপ্রবেশ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু তাই নয় যারা তাদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করতে সহযোগিতা করছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অনুপ্রবেশকারিদের পূর্ণাঙ্গ যাছাই বাছাইয়ে বাদ দেয়া হবে বলে তিনি জানান
পাঠকের মতামত: